ইসরায়েল ৯০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিলো

দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি। চুক্তির আওতায় প্রথম দিনে ইসরায়েলি তিন নারী বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস। রবিবার (১৯ জানুয়ারি) গাজার আল-সায়রা স্কয়ারে তাদের রেডক্রসের হাতে তুলে দেন হামাসের যোদ্ধারা। এরপর জিম্মিদের গাজায় অবস্থানরত ইসরায়েলি সেনাদের কাছে নিয়ে যায় রেডক্রস। সেখান থেকে তাদের ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এরপরই কারাগার থেকে ৯০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত সকলেই নারী ও শিশু। সোমবার (২০ জানুয়ারি) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের জেল সার্ভিস। হামাস বলছে, গাজা থেকে প্রতিজন বন্দির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ৩০ জন করে ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এদিকে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম দিনেই ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই নারী বা শিশু। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে রয়েছে খালিদা জারার নামের একজন রাজনীতিবিদ। তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরে পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) নেতা। জারার এর আগে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব সম্পর্কে তার প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন। আর এই অভিযোগে উসকানিসহ অন্যান্য অভিযোগের জন্য একাধিকবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে বন্দি হয়েছিলেন। আল জাজিরার নিদা ইব্রাহিমের মতে, মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শিশুও রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে ইসরায়েলি সৈন্যদের দিকে ঢিল ছোঁড়ার জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। ফিলিস্তিনি বন্দি ও সাবেক বন্দি বিষয়ক কমিশন এবং প্যালেস্টানিয়ান প্রিজনার্স সোসাইটি অনুসারে, বর্তমানে দখলকৃত পশ্চিম তীরের ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তবে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময় অবরুদ্ধ এই উপত্যকা থেকে ঠিক কত ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে সেই সংখ্যা অজানা। এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তিন জিম্মির বিষয়ে বলেছে, কিছুক্ষণ আগে প্রতিরক্ষা বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সেনারা মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের নিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছেন। এখন জিম্মিরা দক্ষিণ ইসরায়েলের প্রাথমিক গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন। সেখানে তাদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সাবেক জিম্মি রোমি গোনেন, এমিলি দামারি এবং দোরোন স্টেইনব্রিচার এ মুহূর্তে নিরাপদ আছেন। তারা আমাদের কাছে আছেন। তারা বাড়ি ফিরছেন। গাজায় জিম্মিরা অমানবিক অবস্থায় আছে দাবি করে হ্যাগারি আরো বলেন, যেসব জিম্মি এখনো অমানবিক অবস্থায় গাজায় আছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। আমরা তাদের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি সরকার তিন জিম্মিকে বরণ করে নিয়েছে। সরকার সব জিম্মি ও নিখোঁজদের ফিরিয়ে আনার জন্য বদ্ধপরিকর। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে হামলা চালিয়ে এসব জিম্মিকে ধরে নিয়ে যায় হামাস। এরমধ্যে ওই বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সাত দিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়। ওই সময় ১০৫ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। এরপর চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়ার পর সামরিক শক্তি ব্যবহার করে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা জিম্মিদের মরদেহ আনতে পেরেছে। রবিবার থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলবে ৪২ দিন। এই সময়ে ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। অপরদিকে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের কারাগার থেকে ছেড়ে দেবে। প্রথম ধাপ চলার সময় দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা হবে। ওই ধাপে সব জিম্মিকে মুক্তি এবং গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে। আমারবাঙলা/এমআরইউ

from Amarbangla Feed https://ift.tt/oJCXEIf

Post a Comment

0 Comments