চট্টগ্রামে আদালত ভবনের সামনে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সংঘর্ষে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের বাড়িতে চলছে মাতম। তার নিহতের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তার গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ার চুনতিতে আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীসহ দূর দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। আলিফের মাসহ স্বজনরা বুক চাপড়ে কাঁদছেন। ৩২ বছরের যুবক আলিফকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তার পরিবার। আলিফকে হারিয়ে সন্তানসম্ভাবা স্ত্রীর চোখে ঘোর অমানিশা। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হয়। পরে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করা সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনের বড় ভাই তারেকুল ইসলাম জানান, আইনজীবী আলিফের সঙ্গে তার বোন তারিনের বিয়ে হয় সাড়ে তিন বছর আগে। তাদের তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের এক কন্যা সন্তান আছে। তারিন এখন সাত মাসের সন্তানসম্ভাবা। স্বামীকে সন্ত্রাসীরা জবাই করে হত্যা করেছে এ খবর শোনার পর হুঁশ হারিয়েছেন তারিন। তার ভবিষ্যৎ কী হবে, তার সন্তানদের কী হবে এসব ভেবে তারিন হতাশ। তিনি আরো বলেন, খুনিরা আমার বোনের জামাইকে অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে দেয়নি, নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। নিহতের স্বজন ঈশা সাঈদী বলেন, নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতী ইউনিয়নের ফারাঙ্গা এলাকায়। পুরো গ্রামজুড়ে মাতম চলছে, কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা। নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের পিতা জামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, আমার পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সাইফুল ছিল তৃতীয় সন্তান। আমার ছেলে নামাজি, নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ ছিল, তাহাজ্জুদ নামাজও মিস করতো না। আমার ছেলে এভাবে আমার আগে চলে যাবে আমি কখনো কল্পনা করিনি। বিনা অপরাধে যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ছাত্রজীবনে মেধাবী সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাশ করেছিলেন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে প্র্যাক্টিস করতেন তিনি। প্রতিদিনকার মতো ঘটনার সময়ও আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। মঙ্গলবার বিকালে আদালত ভবনের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষে তিনি নিহত হন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আলিফের জানাজা নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে বুধবার (২৭ নভেম্বর) বেলা ১১টায় এবং গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতিতে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে। দু দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। আমারবাঙলা/এমআরইউ
from Amarbangla Feed https://ift.tt/O58otnm
0 Comments